in

ফ্রান্স থেকে অনুদান নয়, বিনিয়োগ চাই: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত দশ বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হয়েছে। অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। একসময় বাংলাদেশকে অনুদান দিত। বাংলাদেশ নিয়ে প্যারিসে একটি ডোনেট ক্লাবও ছিল। এখন আমরা এইড বা সাহায্য চাই না, বিনিয়োগ চাই। এখানে পার্টনার খুঁজতে এসেছি। এটাই আজকের পরিবর্তন।

সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ-ফ্রান্স ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-প্যারিস-২০২৩’ শীর্ষক রোডশোতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, ইউনেস্কোর অ্যাম্বাসেডর খন্দকার এম তালহা, ফ্রান্স বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পিয়েরে জিন মালগুয়েরেস, দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেন।

মূল প্রবন্ধে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশ্বে ফ্রান্স একটি বৃহত্তম বাজার। এই বাজারে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত মিসিং আছে, সেগুলো পৌঁছে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। কারণ বাংলাদেশ সম্পর্কে তারা ভুল তথ্য নিয়ে ভালোভাবে আমাদের দেশকে পর্যালোচনা করতে পারেনি। এখন তারা জানতে পারছে, বুঝতে পারছে এবং বাংলাদেশকে ফ্রান্স পার্টনার মনে করে। আগে তারা বাংলাদেশকে অনুদান দিত এবং প্যারিসে একটি বাংলাদেশ নিয়ে ডোনেট ক্লাব ছিল। এখন আমরা এইড বা সাহায্য চাই না। আমরা এখন বিনিয়োগ চাই। এখানে পার্টনার খুঁজতে এসেছি। এটাই আজকের পরিবর্তন।’

বিএসইসি ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সহযোগী হিসেবে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুই দেশের দূতাবাস।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরিয়ে মাসদুপিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের চিন্তা করছে প্যারিস। দেড় মাস আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশ সফর করেছেন। এই সফরে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’

ফ্রান্স-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পিয়েরে জিন মালগুয়েরেস বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জানতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে বিজনেস ডেলিগেশন যাবে। তারা সেখানের পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে।’

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত ১০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হয়েছে। অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। শ্রমের মূল্য কম এবং বিনিয়োগ করলে মুনাফা সহজে দেশে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ইউরোপের তিন দেশে রোডশো বা বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।’

‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। এরই মধ্যে সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে যে অর্জন ও সম্ভাবনা আছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের দেশে সেভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণে এ ধরনের রোডশো বড় ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন, তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় জানানো হয়।

থ্রি আই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইস্তাক আহম্মেদ শিমুল বলেন, ‘প্যারিস ফ্রান্সে বিএসইসি এবং বিডা কর্তৃক আয়োজিত আজকের এই ব্যবসায়িক সম্মেলন সফল হোক। আমি আশা করি এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটসহ অন্যান্য সেক্টরে ফরাসি বিনিয়োগ বহু গুণ বাড়বে।’

প্রসঙ্গত, প্রথম দফায় দুবাইয়ে, দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রে, তৃতীয় দফায় সুইজারল্যান্ডে, চতুর্থ দফায় যুক্তরাজ্যে, পঞ্চম দফায় কাতারে ও ষষ্ঠ দফায় জাপানে এবং সপ্তম দফায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সফলতার সঙ্গে রোডশো শেষ করে বিএসইসি। সাতটি দেশে এই রোডশো ১২টির বেশি শহরে আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, কানাডা, রাশিয়া, ইতালি, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে রোডশোর আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন। এ ছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন, তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings