in

ডানপন্থী রাজনীতিতে ধাক্কা, লো পেনের সাজা নিয়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফরাসি কট্টর ডানপন্থী নেতা মারিন লে পেনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে প্যারিসের একটি আদালত আজ মারিন লে পেনকে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে। যার মধ্যে দুই বছর স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়াও, তাকে ১ লাখ ইউরো জরিমানা এবং ৫ বছরের জন্য সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
লে পেন এবং তার ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন) দলের ২৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে তারা ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দলের জন্য কাজ করা কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদীয় সহযোগীদের জন্য অর্থ ব্যবহার করেছেন, যা ইইউ ভুক্ত ২৭ জাতী রাষ্ট্রের নিয়ম লঙ্ঘন করেন। লে পেন এবং তার সহ-আসামিরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এই ব্যবস্থায় ব্রাসেলসে ইইউ পার্লামেন্টের সহকারী হিসেবে প্যারিসের আরএন কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যদিও তারা সংসদে কার্যত কোনো ভূমিকা পালন করেননি। এই কর্মীদের মধ্যে লে পেনের ব্যক্তিগত সহকারী ক্যাথরিন গ্রিসেটও ছিলেন, যিনি আগস্ট ২০১৪ থেকে অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টা সংসদ ভবনে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে যে লে পেনের কার্যক্রম ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিলের অপব্যবহার

এবং জনগণের বিশ্বাসের লঙ্ঘন করেছে। বিচারক বলেন, “জনগণের অর্থের এমন অপব্যবহার অগ্রহণযোগ্য এবং এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।
রায়ের পর লে পেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, “এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার চেষ্টা। আমি ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

৫৬ বছর বয়সী লে পেন ২০১৭ এবং ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার দলের নির্বাচনী সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই রায় ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে। লে পেনের কারাদণ্ড এবং সরকারি পদে থাকার অযোগ্যতা তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, আপিলের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন।
২০২৭ সালে লে পেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে, তা হলে তার উত্তরসূরি হবেন জর্ডান বারডেলা, যিনি লে পেনের (২৯ বছর) শিষ্য, যিনি ২০২১ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে দলের প্রধান হন।
প্রসিকিউটররা আদালতের কাছে লে পেনকে দোষী ঘোষণা করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য জন্য আবেদন করেন। লে পেন বলেন, তিনি মনে করেন আগামী ২০২৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দিতেই এই রায় ঘোষণা।

এদিকে সোমবার রাশিয়া এই রায়কে ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা করেছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই রায় সর্ম্পকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে।তিনি বলেন “আরও বেশি সংখ্যক ইউরোপীয় রাজধানী গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের পথে যাচ্ছে,” সাজা ঘোষণার পরপরই হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান লে পেনের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করে বলেন ‘আমি মেরিন!’

লে পেনের সমর্থকরা এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করেন যে এই রায় ন্যায়বিচারের প্রতিফলন এবং রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহিতার প্রমাণ।

মারিন লে পেনের বিরুদ্ধে এই রায় ফ্রান্সের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আপিল প্রক্রিয়া এবং এর পরবর্তী ফলাফল ফ্রান্সের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই রায়ের ফলে ফ্রান্সের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে এবং মারিন লো পেনের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে তার দল এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings