নৌবাহিনীর ‘সিম্যান’ পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন সাতজন। খিলক্ষেতে পরীক্ষা শেষে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনের ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ ধরে হাঁটছিলেন তাঁরা। হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এসে তাঁদের পেছন থেকে জোরে ধাক্কা দেয়।
রোববার বেলা দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় গুরুতর আহত তিনজনকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। বাকিরা সামান্য আহত হয়েছেন।
ডান পা ভেঙে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গাইবান্ধা আদর্শ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘সেকেন্ডের মধ্যে কী হয়ে গেল, বুঝে উঠতে পারিনি। এটা যে গাড়ির ধাক্কা ছিল, তা–ও বুঝতে পারিনি। ৫–১০ মিনিট অজ্ঞান অবস্থাতেই সেখানে পড়েছিলাম।’
রাজধানীর বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদ আহমেদ জানান, গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। চালক মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক বলেছেন, গাড়ির সামনের একটি চাকা বিকল ছিল। তদন্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
আহত ব্যক্তিরা জানান, ফুটপাত না থাকায় সড়কের পাশ ধরে একজনের পেছনে অন্যজন হাঁটছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড গতিতে আসা সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার তাদের ধাক্কা দেয়। এতে সাতজনের দলের পেছনে থাকা মো. সামিউল ইসলাম, মামুন অর রশীদ ও মো. আকাশ গুরুতর আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুর্ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান সামিউল, তার ডান পা ভেঙে গেছে। প্রাইভেট কারের আঘাতে মামুন গাড়িটির ওপরে উঠে গ্লাসের ওপরে গিয়ে পড়েন। তাঁরও ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। মারাত্মক জখম হয়েছে আকাশেরও।
সাতজনের দলে আরও ছিলেন আতিক মাহাবুব নুর, ফজলে রাব্বী, রাকিব ও সম্পদ। তাঁদের সবার বাড়িই গাইবান্ধায়। সাতজনের মধ্যে আহত মামুন, সামিউল ও রাকিব প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন।
নৌবাহিনীর পরীক্ষা দিয়ে তারা গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। সাতজনের কেউই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় তারা কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. কাইয়ুম হোসেন বলেন, বিমানবন্দর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তিনজন হাসপাতালে এসেছেন।
তাদের মধ্যে একজনকে (সামিউল) অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়েছে। তাকে ভর্তি করা হবে। বাকি দুজন তুলনামূলক ভালো আছেন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাসায় থেকে পরবর্তী সময়ে বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথা হয় এ ঘটনায় আহত মামুন অর রশিদের সঙ্গে। ভাঙা পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে জরুরি বিভাগের বিছানায় শুয়ে ছিলেন নলডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের এই ছাত্র।
দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধাক্কা থেকে আমি গাড়ির গ্লাসের ওপরে পড়লে সেটি ভেঙে যায়। পরক্ষণেই নিচে পড়ে যাই। মাথা ফেটে যায়। সেখানে তিনটি সেলাই লেগেছে। কনুইতে সেলাই লেগেছে দুটি। কোমরে আঘাত লেগেছে। পরে অটোরিকশায় হাসপাতালে এসেছি।’
গাইবান্ধার বাসের জন্য তারা বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন জানিয়ে মামুন বলেন, ‘রাস্তার একদম পাশ ধরে একজনের পেছনে আরেকজন হাঁটছিলাম। সেখানে কোনো ফুটপাত ছিল না, গাড়িটি হর্নও দেয়নি। হঠাৎ এসে আমাদের ওপর উঠিয়ে দিল। গাড়ির চালক বলেছে চাকা বিকল হয়ে এমন হয়েছে। কিন্তু চাকা বিকল হলেও এত জোরে গাড়িটি কীভাবে ধাক্কা দিল, তাই বুঝতে পারছি না।’
সাতজনের দলে মাঝামাঝি ছিলেন আতিক মাহাবুব নুর। তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট কারের ধাক্কায় পেছনের তিনজন মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমি ছিলাম মাঝে। আমারও পায়ে আঘাত লেগেছে। ঘটনাটি এমনভাবে ঘটেছিল, আমার শরীর কাঁপছিল। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে গাড়িটা থানায় নিয়ে যায়।’
GIPHY App Key not set. Please check settings