বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ও উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিতে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই।
তারেক রহমান এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করাই এই মুহূর্তের প্রধান অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত হামলার ছক তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। হাসিনা পতন আন্দোলনের পক্ষের শক্তি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে বিতাড়িত অপশক্তি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণ অভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করতে হলে বিতাড়িত গণবিরোধী শক্তিকে আইনের মুখোমুখি করার পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা।
তারেক রহমান বলেন, গণহত্যাকারী হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তাই, দেশে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এবং জনপ্রত্যাশা পূরণে একটি নিরাপদ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এখনই সময়। লাঞ্চিত, বঞ্চিত ও অধিকারহারা মানুষ একটি স্বাধীন, নিরাপদ ও মর্যাদাকর জীবনের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র মানবাধিকার ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে এ সময় অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থানে গণহত্যাকারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার হাত বদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির কাক্সিক্ষত গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাকে টেকসই করতে হলে জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে বিনীত আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফল করতে হলে কেউ দখলদারিত্বে লিপ্ত হবেন না, এতে সহায়তা করবেন না। কেউ দুর্বলের ওপর আঘাত হানবেন না, আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।
তারেক রহমান প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বদলে কার্যকর রাষ্ট্র সংস্কার নিশ্চিত করতে তারুণ্যের কাক্সিক্ষত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছেন। অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন। অনেকের হাত কিংবা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। শত শত মানুষ চোখ হারিয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ৫ আগস্ট গণতন্ত্রকামী মানুষ আরো একবার স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করলেও হাসিনা পতন আন্দোলনে যেসব পরিবার তাদের সন্তান স্বজন হারিয়েছেন কিংবা আহতদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যেসব পরিবারে অবর্ণনীয় দুর্দশা নেমে এসেছে, সেইসব বীর সন্তানদের ঘরে স্বাধীনতার স্বাদের ছোঁয়া লাগেনি।
তারেক রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
তিনি ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে সাধ্যমতো প্রবাসীদেরকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
GIPHY App Key not set. Please check settings