in

গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে: ফখরুল

গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের আদালতে ওঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে এবং রিমান্ডে নিয়ে আবারও নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বর্তমান অবৈধ সরকার মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হকসহ কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে শনিবার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, রিমান্ড শেষে নুরুল হককে আদালতে নেওয়ার যে চিত্র গণমাধ্যমে এসেছে, তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। এমন নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ ধরনের বর্বরোচিত কাজ পুরো সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।

রিমান্ডে ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু তাই নয়, গ্রেপ্তারকৃতদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনি রচনা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গুম করে নির্যাতন করে কীভাবে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে, তা তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই বোঝা যায়।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়নি। যদি তাই হয়, তাহলে জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় শিশু সামির কীভাবে নিহত হলো—এই প্রশ্ন দেশবাসীর। ছাত্রদের গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়ার পর এখন তাদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া এবং সেখানে মায়াকান্না করা ও চিকিৎসায় সাহায্য করার কথা বলা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার আরেকটি দৃষ্টান্ত।

বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিক সাঈদ খানকে ২৫ জুলাই গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সাঈদ খান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি। তিনি কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচার গণহত্যার খবর অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিবেশন করে আসছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এরপর সাঈদ খানকে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কেবল বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদেরই নয়, তারা এখন ফ্যাসিবাদবিরোধী কণ্ঠস্বরকে লক্ষ্য করেছে। তাই প্রতিবাদী সাংবাদিক, নির্ভীক লেখক ও গণতন্ত্রকামী বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের খেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রায় ৩৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা এবং অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কারাবন্দী করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নওয়াব আলীর একটি চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া, গণ অধিকার পরিষদের নেতা আবু হানিফ ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার নিন্দা জানান।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা সরকারকে এই ভয়ংকর গ্রেপ্তার খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তারেক রহমানকে নিয়ে সরকারের মিথ্যা প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারকে বলব, সব হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ এবং দেশের মানুষকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings