in

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হামাস, কী আছে প্রস্তাবে

স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এ সংগঠনটি আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তা করতে সম্মত তারা।

হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোকে স্বাগত জানায় হামাস। ওই প্রস্তাবে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া, বন্দিবিনিময়, গাজা পুনর্গঠন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের এলাকায় ফিরিয়ে আনা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ থেকে গত ৩১ মে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। ওই প্রস্তাবের ওপর গতকাল সোমবার ভোটাভুটি হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় পরিষদের ১৫ সদস্যদেশের মধ্যে ১৪টি। ভোটদানে বিরত ছিল শুধু রাশিয়া। জাতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, প্রস্তাবটিতে ‘অস্পষ্ট কিছু বিষয় রয়েছে’।

গাজায় আট মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহত প্রায় ৮৫ হাজার। ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধে এর আগেও কয়েকবার নিরাপত্ত পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তবে দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করায় তা আলোর মুখ দেখেনি।

এরই মধ্যে গত মাসে গাজার রাফা এলাকায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন বাইডেন। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পর জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্র শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছে। ইসরায়েল এরই মধ্যে প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। হামাসও একই পথে হাঁটলে এখনই যুদ্ধ বন্ধ হবে।

প্রস্তাবে ইসরায়েলের সায় আছে—এ কথা জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেও এ নিয়ে এখনো খোলাখুলিভাবে কিছু জানায়নি ইসরায়েল সরকার। প্রস্তাব পাশের পর জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান বলেছেন, তাঁর দেশ গাজা নিয়ে এমন কোনো অর্থহীন ও দীর্ঘমেয়াদি আলোচনায় জড়াবে না, যেটা হামাস নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে।

নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে গাজায় ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি চলবে। এ সময় হামাসের হাতে বন্দী থাকা জিম্মিদের একাংশকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। একই সঙ্গে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের এলাকায় ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে।

প্রথম ধাপে গাজার সব এলাকায় বাধাহীনভাবে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা সরবরাহের সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বাইডেনের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন গাজায় সর্বোচ্চ ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। এ সময় গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় ধাপে ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।

জাতিসংঘে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটিকে এগিয়ে নিতে মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। আজ ইসরায়েলে অবস্থানকালে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি নিয়ে ইসায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘আবারও তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত’ করেছেন। প্রস্তাবের পক্ষে হামাসের সমর্থনও একটি আশা জাগানো ইঙ্গিত।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস–ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে অষ্টমবারের তো ওই অঞ্চল সফরে গেলেন ব্লিঙ্কেন। এবার তিনি ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় দুই নেতার সঙ্গেও আলাপ করেছেন। এরপর আজই জর্ডানের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে তাঁর গাজায় ত্রাণসহায়তা–বিষয়ক একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings