in ,

যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনামের সম্পর্কোন্নয়নে কার লাভ হচ্ছে, কার ক্ষতি

যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠেছে। যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনাম একসময় দীর্ঘ প্রায় দুই দশকব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে, সেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন ভিয়েতনামের চোখে সমান। হ্যানয় কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের কাতারে উন্নীত করেছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দুয়ার উন্মোচিত হবে।

তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, কোনো খেলায় কেউ যখন জেতে, তখন কেউ না কেউ হারে। ভিয়েতনাম-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নের কারণে কিছু কিছু দেশ ও কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেখে নেওয়া যাক, কারা সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে:

চীন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কারণে চীনের সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্কের অবনতি হবে না, এ কথা হ্যানয় জোর দিয়ে বলতে পারছে না। তবে বাস্তবতা হলো, এ ঘটনার প্রভাব অনিবার্যভাবে চীনের ওপর পড়বে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন ব্যবসা হারাতে পারে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর খাতে। যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ইলেকট্রনিক পণ্যের এই প্রাণভোমরার জন্য এককভাবে তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল না থাকা।

এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, চীন বিশ্বাস করে, দুটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির লক্ষ্যবস্তু তৃতীয় কোনো দেশ হতে পারে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি স্নায়ুযুদ্ধ ও আধিপত্যবাদী মানসিকতা পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়া

সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের পাশাপাশি রাশিয়ারও সুসম্পর্ক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বস্তুত রাশিয়া ভিয়েতনামের খুবই ঘনিষ্ঠ অংশীদার। রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র কেনে ভিয়েতনাম। দেশটির অস্ত্রভান্ডারে যত অস্ত্র আছে, তার ৮০ শতাংশই রাশিয়া থেকে কেনা।

এবার জো বাইডেনের হ্যানয় সফরে ওয়াশিংটন অস্ত্র চুক্তির কথা না বললেও সম্পর্ক যে উচ্চতায় উঠেছে, তাতে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভবিষ্যতে অস্ত্রও কিনতে পারে।
সেটা ঘটলে রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর হ্যানয়ের নির্ভরশীলতা কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়, যদিও হ্যানয় বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র চুক্তির আলোচনা করছে।

এয়ারবাস

এবার জো বাইডেনের হ্যানয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস ৫০টি ৭৩৭ ম্যাক্স জেট কেনার চুক্তি করেছে। এত দিন ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস বোয়িংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসের বিমান দিয়ে উড়ান পরিচালনা করেছে।

ফলে এখন এয়ারবাস ও বোয়িং একই খদ্দরের সঙ্গে ব্যবসা করছে। সরু আকারের বিমানের বাজারে এই দুটি কোম্পানির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে।
তবে এভাবে একটি বিমান সংস্থার পক্ষে নতুন কোম্পানির বিমান কেনা ও বহরে যুক্ত করা সহজ কাজ নয়। এর জন্য পাইলটদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে হয় এবং সেই সঙ্গে যন্ত্রাংশ পাওয়া ও তার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার বিষয় আছে। এসব কাজে অনেক সময় লেগে যায়।

এ বিষয়ে এয়ারবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এয়ারবাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন কোনো বিষয়ে আমরা মন্তব্য করি না। তবে ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খদ্দর; আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই।’

মানবাধিকার

জো বাইডেনের হ্যানয় সফরের সময় হোয়াইট হাউস যে ফ্যাক্ট শিট দেয়, তাতে ছিল মাত্র ২ হাজার ৬০০ শব্দ। এর মধ্যে মানবাধিকারবিষয়ক শব্দ ছিল মাত্র ১১২টি, একটি উপশিরোনামসহ।

এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অঞ্চলের অ্যাডভোকেসি–বিষয়ক পরিচালক ক্যারোলাইন ন্যাশ বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন নিশ্চিতভাবেই হ্যানয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের খাতিরে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ দূরে সরিয়ে রাখছে। কারণ, কৌশলগতভাবে ভিয়েতনাম এখন তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি সরকারের জমানায় বর্তমানে রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা ১৫৯।

মালয়েশিয়া ও ভারত

ওয়াশিংটন ভিয়েতনামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও চিপশিল্পের বিকাশে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে। মার্কিন কোম্পানিগুলো সেখানে বিনিয়োগ করবে, যার মধ্যে ১৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে আমকর একটি কারখানা নির্মাণেরও অঙ্গীকার করেছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ ও প্রভাবশালী কোম্পানি যেমন এনভিডিয়া ও মাইক্রোসফটের সঙ্গে ভিয়েতনামের কোম্পানিগুলোর অংশীদারি হবে।

এতে ভারত ও মালয়েশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মার খেতে পারে। কারণ, তারাও এই বাজারে ঢোকার প্রতিযোগিতায় আছে।

এইএস ও সিমেন্স

বাইডেনের সফরে আরও কিছু ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিয়েতনামে ব্যাটারি শক্তি সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সোলার কোম্পানি এএমআই ও মার্কিন কোম্পানি হানি ওয়েলের মধ্যে অংশীদারি হয়েছে।

এতে জার্মান কোম্পানি সিমেন্স ও মার্কিন কোম্পানি এইএস মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে। কারণ, এরা বর্তমানে ভিন্ন এক সরবরাহকারীর মাধ্যমে ভিয়েতনামে ব্যাটারি শক্তি সংরক্ষণাগার পরিচালনা করছে। এখন তারা সেখানে যা উৎপাদন করছে, তা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিমেন্স ও এইএসের মূল কোম্পানি ফ্লুয়েন্সের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া দেয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings