
সাইফুল ইসলাম রনি, প্যারিস
প্যারিস, ১৪ জুলাই ২০২৫ — বিপ্লব, স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ‘বাস্তিল ডে’ উদযাপনে আজ ফ্রান্স জুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। ১৭৮৯ সালের এই দিনে বাস্তিল দুর্গ পতনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় ফরাসি বিপ্লব, যা বিশ্বজুড়ে প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ধারণা ছড়িয়ে দেয়। এই দিনটি আজও ফ্রান্সে জাতীয় দিবস হিসেবে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে উদযাপিত হয়।
বাস্তিল দুর্গ ছিল রাজতান্ত্রিক নিপীড়নের প্রতীক। ১৪ জুলাই ১৭৮৯ সালে প্যারিসবাসীরা এটি দখল করে ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করে। এই বিপ্লব পরবর্তীতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায় এবং ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে। সেদিনের ঘটনাই আজকের ‘ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল ডে’ বা বাস্তিল ডে।

দিনটির প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজধানী প্যারিসের চ্যাম্প-এলিসি বুলেভার্ডে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজ। এতে অংশ নেয় প্রায় ৭,০০০ সেনাসদস্য, ২৪০টি সামরিক যান, এবং শতাধিক বিমান ও হেলিকপ্টার। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সামরিক গার্ডের সালাম গ্রহণ করেন।
বিশেষ অতিথি দেশ হিসেবে এবছর আমন্ত্রিত ছিল ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রাবোও সুবিয়ান্তো ও দেশটির সেনা দল কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁ তার ভাষণে ইউরোপীয় নিরাপত্তা, আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলায় ফ্রান্সের সক্রিয় ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী দুই বছরে দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট €৬.৫ বিলিয়ন বাড়ানো হবে, যা ২০২৭ সালের মধ্যে €৬৪ বিলিয়নে পৌঁছাবে। তার এই ঘোষণাকে অনেকেই ইউরোপীয় ভূরাজনীতিতে ফ্রান্সের দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
সন্ধ্যায় প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে এক মনোমুগ্ধকর আতশবাজির প্রদর্শনী ও ড্রোন লাইট শো অনুষ্ঠিত হয়। ফ্রান্সের প্রতিটি বড় শহর ও গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় নাচ-গান, মিছিল, এবং ঐতিহ্যবাহী “ব্যাল দে পম্পিয়ে” বা দমকল বাহিনীর বল।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এবার বিভিন্ন পেশাদার ও নাগরিককে ‘লেজিয়ন অব অনার’ পদকে ভূষিত করা হয়—যাদের মধ্যে ছিলেন যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা সমাজকর্মী গিসেল পেলিকো।
বাস্তিল ডে শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণ নয়; এটি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সামাজিক একাত্মতার পুনর্ব্যক্তি। এ দিবস ফরাসিদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে স্বাধীনতা কোনো একক অর্জন নয়—বরং একটি চলমান অঙ্গীকার।
এই দিনে ফ্রান্স তার অতীত বিপ্লবকে শ্রদ্ধা জানায় এবং ভবিষ্যতের জন্য এক সংহত জাতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
GIPHY App Key not set. Please check settings