তিন মাসের বেশি সময় ধরে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বিবৃতি ও বক্তব্যকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ভালোভাবে দেখছে না’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিকবার বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার ও ভারত সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছে।
“তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে যে রাজনৈতিক বিবৃতি ও বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটি বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে দেখছে না।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “এ ব্যাপারে সরকারের তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত রাখার জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
“এবং একইসাথে এটি বলা হয়েছে আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সেটির জন্য এ ধরনের বক্তব্য থেকে তাকে বিরত রাখাটা খুবই জরুরি।”
কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের প্রবল গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে ৫ অগাস্ট গণভবন থেকে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা।
খবরে বলা হয়, গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে বিমানবন্দরে, সেখান থেকে বিমান বাহিনীর একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজে আগরতলা হয়ে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে নামেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসন ক্ষমতার পর তিন মাসের বেশি সময় ভারতে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে তিনি সংবাদমাধ্যমে কোনো বক্তব্য না দিলেও আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে তার নামে কয়েকটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশ ও বিদেশে অবস্থান করা নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁসের খবরও প্রকাশ হয়েছে। তবে সেগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতিরই কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিক্রিয়ার জবাব ভারত দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসানকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা যখন বিষয়টি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে উত্থাপন করেছিলাম, তখন জানিয়েছেন যে তিনি বিষয়টি তার সরকারের কাছে জানাবেন। আমরা আসলে সত্যিকার অর্থে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও জবাব পাই নাই। তারা বিষয়টি দেখবেন এরকম জানিয়েছেন।”
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং প্রত্যাবর্তন চুক্তির আলোকে তাকে ফেরানো হবে কি না, এমন প্রশ্নে তৌফিক হাসান বলেন, “আসলে এই বিষয়তো একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
“এখানে যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কার্যালয় থেকে আমাদরেকে জানানো হয়- এখনও কিন্তু অফিসিয়ালি জানানো হয়নি- সেক্ষেত্রে আমরা যদি নির্দেশনা পাই, অবশ্যই তখন আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেব।”
ভারতের ভিসা পাওয়া সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলে আসছি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে তাদের লোকবল সংকটের কথা জানিয়েছে।
“স্বাস্থ্য ভিসা এবং তৃতীয় দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রত্যাশীদের বিষয়টি যেন তারা দ্রুত করেন, সে বিষয়টি আমরা তাদেরকে জানিয়েছে এবং রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়া সহজ করার অনুরোধ করেছি।”
GIPHY App Key not set. Please check settings