in , ,

বিসিএস কেন তরুণদের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠছে?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক হিসাবমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। মার্চে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজারে।

অন্যদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলছে, দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যা অস্বীকার করা হচ্ছে বা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের মতে, দেশের ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। আর এই বেকারত্বের বড় কারণ, তরুণেরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে পেশাগত কাজের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।

আরও পড়ুন‘বিসিএস–জ্বর’ থেকে তরুণদের বাঁচাবে কে

তরুণেরা অবশ্য বেকারত্বের সংখ্যা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দুর্বলতা নিয়ে ভাবতে চান না। তাঁরা চোখ-কান বুজে চাকরির পেছনেই ছুটছেন। তাঁরা জানেন, চাকরির বাজার কঠিন। এর মধ্যে সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’–এর মতো; সহজে ধরা দেয় না। আর বেসরকারি চাকরির শর্তে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা; তাই অনেক ক্ষেত্রে আবেদন করাও যায় না। এর বাইরে নিজে উদ্যোগী হয়ে কোনো কাজ করাও অসম্ভবপ্রায়; কারণ বিনিয়োগ করার মতো টাকা তাঁদের হাতে নেই।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএসের জন্য আবেদন করা তরুণদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায়। বিসিএসকে উপলক্ষ করে অন্তত তাঁরা কয়েক বছরের জন্য আশায় বুক বাঁধতে পারেন।

বিসিএস চাকরির প্রতি শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। একটি বড় কারণ, এখন পর্যন্ত বিসিএস নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম ঢুকে পড়েনি। বাছাই পরীক্ষা থেকে শুরু করে ভাইভা পর্যন্ত প্রার্থীকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়।

এমনকি বিসিএসে এখন কোটার বাড়তি সুবিধা নেই—সব প্রার্থীই সমান সুযোগ নিয়ে প্রতিযোগিতা করেন। বিসিএসের বাইরে সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য পরীক্ষায় অনিয়মের কথা শোনা যায়। পছন্দের প্রার্থীকে নেওয়ার প্রবণতা, অযোগ্য প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করা, টাকা দিলে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া—এগুলো এখন গোপন কোনো ব্যাপার নয়।

আরও পড়ুনমুখস্থনির্ভর বিসিএস পরীক্ষা আর কত দিন

সমস্যা আরেক দিকেও আছে। চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখলেই তরুণেরা আবেদন করতে পারেন না। ‘অভিজ্ঞতার অভাব’ তাঁদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান অন্য সব শর্তের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও চায়। কিন্তু সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা একজন তরুণের পক্ষে অভিজ্ঞতা দেখানো সম্ভব হয় না।

এদিক থেকে ব্যতিক্রম বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া। আবেদন করার জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই হয়। কোনো রকম পূর্বাভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ঘাটতিটুকু পূরণ করা হয়।

বিসিএস চাকরির আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। এই চাকরি সমাজে সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। বিসিএস চাকরি মানে বাকি জীবনে আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। তা ছাড়া সিভিল সার্ভিসে এমন কিছু ক্যাডার রয়েছে, যেগুলো ব্যক্তিকে প্রবল ক্ষমতার অধিকারী করে তোলে। অন্য চাকরির ক্ষেত্রে বিসিএসের মতো এতগুলো ব্যতিক্রমী সুবিধা একসঙ্গে পাওয়া যায় না।

এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণেরা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। লক্ষণীয় ব্যাপার, ইদানীং ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররাও পেশাগত ক্যাডারের চেয়ে বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে সুযোগ পেতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings