in ,

ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোট চলছে

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ চলছে। প্রথম দফার সফলতা ধরে রেখে সরকার গঠনের বিষয়ে জোর আশাবাদী কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন)। তবে দলটি শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না—এমন সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।

আরএন যদি পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তা হবে ফ্রান্সের ইতিহাসে বড় এক বাঁকবদল। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কট্টর ডানপন্থী কোনো দল দেশটিতে ক্ষমতায় বসতে পারেনি। আরএনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইউরোপজুড়ে জনতুষ্টিবাদী দলগুলোর জয়ের পাল্লা আরও ভারী করবে।

ফ্রান্সের ছোট শহরগুলোতে আজ রোববার ভোট গ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায়। বড় শহরগুলোতে ভোট গ্রহণ চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। এর পর থেকে ভোটের ফলাফল আসা শুরু করবে। বুথফেরত জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক দুর্দশার জেরে ফরাসিরা প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় আরএনই পার্লামেন্টে সর্বাধিক আসন পেতে যাচ্ছে।

তবে এমন আভাসও মিলছে যে সর্বাধিক আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য পার্লামেন্টে প্রয়োজনীয় ২৮৯ আসন পাবে না মারিন লো পেনের দল আরএন। ফলে ২৮ বছর বয়সী দলপ্রধান জর্দান বারদেলার প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা অতটাও সহজ হবে না। এর পেছনে অবশ্য কলকাঠি নেড়েছে প্রতিপক্ষ ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট টুগেদার অ্যালায়েন্স ও বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই)।

নির্বাচনের প্রথম দফায় আরএন সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এরপরই এনপিই ২৮ ও টুগেদার অ্যালায়েন্স ২০ শতাংশ ভোট নিজেদের দখলে রেখেছিল। আরএনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আটকাতে দ্বিতীয় দফায় এক জোট হয়েছে বিরোধী এ দুই পক্ষ। আরএনের বিরুদ্ধে পড়া ভোটগুলো যেন একজনই পান, সে জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন দুই পক্ষের দুই শতাধিক প্রার্থী।

বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষী ইতিহাসের কারণে আরএনকে দীর্ঘ সময় ধরে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ফ্রান্সের জনগণের বড় একটি অংশ। তবে সম্প্রতি দলটির সমর্থন বেড়ে যায়। এর পেছনে কাজ করেছে জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে মাখোঁর প্রতি ভোটারদের ক্ষোভ। গত বুধবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে লো পেন বলেন, ‘ফ্রান্সের মানুষ বাস্তবিক অর্থেই পরিবর্তনের আশা করছে।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার এখনো তিন বছর বাকি। এমন পরিস্থিতিতে আরএন যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে, তাহলে রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো পূরণে বড় বাধার মুখে পড়বেন ম্যাক্রোঁ। আর ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠিত হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থা ও নীতিনির্ধারণে অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে।

এমন কোনো সংকটের বিরুদ্ধে ফরাসি নাগরিক প্যাসকেল কুজাঙ্গে। আজ ম্যাক্রোঁর জোটকেই ভোট দিয়েছেন তিনি। প্যাসকেল বলেন, ‘আমাদের দেশ মারাত্মক এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন একটি সরকারব্যবস্থা থেকে আমরা মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা দূরে রয়েছি। দেশ শাসনের পরিস্থিতি থাকবে না, এমন ঝুঁকিও রয়েছে।’

ফ্রান্স যে অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, তাতে শঙ্কিত দেশটির অভিজাত ব্যবসায়ীরাও। মহাকাশবিষয়ক ফরাসি প্রতিষ্ঠান সাফরানের প্রধান রস ম্যাকইনেস বলেন, ‘রোববারের ভোটের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক রূপরেখাই সামনে আসুক না কেন, ১০ বছর আগে যে পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছিল, তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

ফ্রান্সে অভিবাসন কমানো, অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে তাড়াতে আইন সংশোধন এবং পরিবারের সদস্য হিসেবে দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আরএন। দলটির প্রধান জরদান বারদেলা অবশ্য বলেছেন, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সরকার গঠন করবে না তার দল। তবে লো পেনের ভাষ্যমতে, আসনের ব্যবধান খুব বেশি না হলে চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে আরেকটি সম্ভাবনা সামনে আসে। সেটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন দেশ শাসন। তবে এমন সরকার শুধু নৈমিত্তিক কাজগুলোই চালিয়ে নিতে পারবে। কোনো সংস্কারের দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings