রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে সোমবার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে বসছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও পুতিনের বিপক্ষে কার্যত একজনও জোরাল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন না।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রুশরা যে পুতিনের পক্ষে আছেন, তারই প্রমাণ হিসেবে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে হাজির করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে ক্রেমলিন। যদিও তিন দিনব্যাপী ভোট গ্রহণকালে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোয় ইউক্রেনীয় বাহিনী বড় ধরনের কিছু বোমা হামলা চালিয়েছে।
শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় (বলা চলে বিরোধীদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ করায়) পুতিন আবারও যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, সেটা ছিল অবশ্যম্ভাবী। আর এর মধ্য দিয়ে পুতিনের জন্য গত দুই শতাব্দীর মধ্যে রাশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হয়ে গেল।
রাশিয়ায় গত ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক জোসেফ স্তালিন। ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। পঞ্চম মেয়াদ পূর্ণ করলে স্তালিনের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা রুশ শাসক হবেন পুতিন।
পঞ্চম মেয়াদে ছয় বছর, অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকবেন পুতিন। ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে সংবিধান সংশোধন করেছেন তিনি। যদি ষষ্ঠ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট আবার নির্বাচিত হন, তাহলে ক্যাথরিন দ্য গ্রেটকে ছাড়িয়ে পুতিন হবেন রাশিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি। ১৭৬২ থেকে ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন ক্যাথরিন দ্য গ্রেট। ২০৩৬ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকলে পুতিনের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ হয়ে যাবে ৩৭ বছর।
১৯৯৯ সালের শেষ দিন থেকে রাশিয়ার ক্ষমতায় পুতিন। দীর্ঘ এ সময়ে পুতিন নিজের এমন একটি প্রতিচ্ছবি তৈরি কবার চেষ্টা করেছেন যে তিনি হলেন সেই নেতা, যিনি রাশিয়ার জাতীয় পরিচয় রক্ষায় লড়ছেন। পুতিনের দাবি, রাশিয়ার জাতীয় পরিচয় হুমকির মুখে। একে রক্ষা করতে হবে।
এবারের নির্বাচনে যাঁদের পুতিনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো, তাঁরা হয় মারা গেছেন, নয়তো কারাগার অথবা বিদেশে নির্বাসিত। পুতিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত অ্যালেক্সি নাভালনি কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়ার এক মাসের মাথায় দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
তিন দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ রোববার শেষে সোমবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রধান এলা পামফিলোভা ক্রেমলিনের ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় তিনি বলেন, ‘প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ ভোটার পুতিনকে ভোট দিয়েছেন। এটা একটা রেকর্ড।’
পুতিনের নির্দেশে ২০২০ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর জেরে বৈশ্বিক পরিসরে পুতিনকে একঘরে করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। নির্বাচন কমিশনের প্রধান পামফিলোভা বলেন, ‘পশ্চিমাদের এ বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা (রুশরা) একতাবদ্ধ রয়েছি।’
এদিকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই রোববার রাতে বিজয় ভাষণ দেন পুতিন। এ সময় তিনি বহিরাগত চাপ মোকাবিলার ক্ষেত্রে মস্কোর দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিজয় ভাষণে পুতিন বলেন, ‘অনেকে অনেকভাবে আমাদের হুমকি-ধমকি বা আমাদের ইচ্ছা ও চেতনাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে তারা যে এটা করে কখনো সফল হয়নি, ইতিহাসই তার সাক্ষী। এই অপচেষ্টা চালিয়ে তারা কখনোই সফল হয়নি আর ভবিষ্যতেও কখনো সফল হবে না।’
GIPHY App Key not set. Please check settings