in

পারিবারিক সহিংসতার শিকার দম্পতি

পারিবারিক সহিংসতার শিকার দম্পতি

ডেস্ক রিপোর্ট

নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মিনহাজ। বানিয়েছেন নাটক, মিউজিক ভিডিও ও বিজ্ঞাপন। এরপর ২০১৮ সালে জার্মান চলে যান চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর মাস্টার্স করতে। সম্প্রতি দেশে এসে বিয়ে করেছেন। গেল বছরের ৩০ আগস্ট পারিবারিকভাবে আকদ হয় এবং অনুষ্ঠান করে বউ ঘরে তোলেন ২৭ সেপ্টেম্বর। বিয়ের পর থেকে শুরু হয় যৌতুকের জন্য তার স্ত্রী তাহামিদার উপর শ্বাশুড়ি ও ননদের অকথ্য গালিগালাজ আর নির্যাতন। যার জের ধরে মিনহাজ আজ মায়ের মামলার আসামী।মিনহাজের অভিযোগ, নানা ঘটনার জের ধরে ৬ ডিসেম্বর রাতে তাহামিদার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে স্বামী স্ত্রীর ব্যাক্তিগত চ্যাট পড়া শুরু করেন শ্বাশুরি নাসিমা আক্তার ও ননদ আফিয়া আঞ্জুম মালিহা। তখনই প্রতিবাদ করেন মিনহাজ। আর এতে ক্ষেপে গিয়ে মিনহাজকে গালিগালাজ করে শারীরিক আক্রমণ চালান তার মা ও বোন।

দুজনের আক্রমণ থেকে স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাহামিদাও লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হন। ঘটনার রাতেই মিনহাজ ও তাহামিদা ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়ে জরুরী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে ফেনী থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন যার নম্বর ৪৮৫। সাধারণ ডায়েরীর কথা শুনে পরদিন মিনহাজের বোন সকালে ঢাকায় পালিয়ে যান। আর মিনহাজের মা নাসিমা আক্তার সমঝোতা স্বাক্ষর করে জিডি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তারা নিজেরাই সমোঝতার জন্য নিজেদের সুবিধামতো শর্ত লিখে সবাইকে বলতে থাকেন, ছেলে আর ছেলের বউ সম্পদের লোভে এসব কান্ড করছে।মিনহাজের বোন জামাই স্বল্প বেতনভুক্ত সরকারী চাকরিজীবী। স্বামীর অর্থ সংকটে বোন মালিহা হতাশ। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান না হওয়াতেও সেই সংসার টেকানোর দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন মালিহা। এইসব হতাশার প্রভাবে ক্রনিক সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মাকে ব্যবহার করে নববিবাহিত ভাইয়ের সংসারে ঝামেলা সৃষ্টি করে বাবার সকল সম্পত্তি ভোগ দখল করার পায়তারা করছেন মালিহা ও তার স্বামী।

এ উদ্দেশ্যেই ৬ ডিসেম্বর রাতে স্বামী সজিব মাহমুদের প্ররোচনায় মাকে সঙ্গে নিয়ে ভাই ও ভাবীর উপর হামলার কান্ড ঘটায় মালিহা। এতকিছুর পরও শুধুমাত্র সংসারের শান্তির কথা ভেবে বিষয়টির সমাধানে রাজি হন মিনহাজ। কথা ছিলো ১০ ডিসেম্বর সকলে মিলে ফেনী থেকে ঢাকা এসে সমঝোতা স্বাক্ষর করে জিডি তুলে ফেলা হবে। অথচ ৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে যে ঘটনায় মিনহাজ আগেই জিডি করে রেখেছে তারই উল্টো বিবৃতি দিয়ে ৯ ডিসেম্বর সমঝোতার আলাপের ভেতরই গোপনে ফেনী থানায় মামলা করতে যান নাসিমা আক্তার। আগে থেকে একই ঘটনার জিডি থাকায় ফেনী থানা মামলা নিতে না চাইলে আদালতে ২ দিন আগে করা জিডির কথা গোপন করে একমাত্র ছেলে সন্তান মিনহাজের বিরুদ্ধে তার মা নাসিমা আক্তার একটি চাঁদাবাজী, স্বর্ণালঙ্কার লুট ও হত্যার চেষ্টা মামলা দায়ের করে বসেন।

তাই সঙ্গত কারণেই সমঝোতার বিষয়টি বাঁধাগ্রস্ত হয়।আর কোনো অপরাধ না করেও বোনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মায়ের সাজানো মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে ঘুরছেন মিনহাজ। ঘটনাটি স্থানীয় জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।মিনহাজ তার মা নাসিমা আক্তার সম্পর্কে জানান, তার মা বগরাদি ও অহংকারী মানুষ। আরও জানা যায়, বসুরহাট এ এইচ সি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদানের পর থেকে সরকার পতনের আগ পর্যন্ত তিনি মাসে হাতেগুনা কয়েকদিন স্কুলে যেতেন। এছাড়াও স্কুলের পিয়ন, কেরানী ও কিছু ঘনিষ্ঠ শিক্ষকের যোগসাজশে তিনি স্কুলের কেনাকাটা ও টেন্ডারে নিজের প্রভাব বিস্তার করে লুট করেছেন সরকারী টাকা।

ফেনী শহরে ট্রাস্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে নামে বেনামে ও আত্মীয়দের নামে তিনি এই টাকা সরিয়েছেন। এখন চেষ্টা করছেন বিদেশে টাকা পাচার করে অবসরের পরে স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে। পতিত স্বৈরাচারের এই দোসর এখন তদবির চালাচ্ছেন চাকরির শেষ দুইমাসে তিনি যেন বসুরহাট থেকে ফেনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসে একই কায়দায় হরিলুট করতে পারেন।এদিকে তার কন্যার জামাতা সজিব মাহমুদও দুর্নীতি করে কাস্টমসের লোকজন ও সিএনএফ এজেন্টদের দিয়ে বিভিন্ন আমদানীকৃত পণ্যের ডিউটি ট্যাক্স কারসাজি করে কমিয়ে সরকারী রাজস্বের ক্ষতিসাধন করেন নিয়মিতই। এসব কারণে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নাসিমা আক্তার ও সজিব মাহমুদের নামে অভিযোগও দায়ের করেছেন এক সাংবাদিক যার কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।করোনার সময় যখন কাছের মানুষরা একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো তখন সুদূর জার্মানি থেকে নিজ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মিনহাজ ছুটে এসেছিল বাংলাদেশে। মিনহাজের জার্মান ব্যাংক একাউন্টগুলোতে টাকার পরিমাণ জানতে পেরে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মা তাকে পাগল সাজিয়ে ফেনী সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে নিয়ে তাকে একটি কেবিনে আটকে রাখেন। কিন্তু সেখানকার ডাক্তার বা হাসপাতালের কেউ মিনহাজকে পাগল হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি।

তার পরিবারের অনুরোধেই তাকে সেখানে রেখে পারিবারিক অত্যাচারে ভীত মিনহাজের প্যানিকের চিকিৎসা করা হয়।এই প্রতিবেদক সেই হাসপাতালের একজন নার্স এর সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। হাসপাতালের কেবিনে মিনহাজের মা এবং বোন তার জার্মানির সবগুলো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পিন নাম্বার মিনহাজের থেকে এই হুমকি দিয়ে নিয়ে নেন যে গোপন পিন নাম্বার না দিলে তাকে সেখান থেকে বের করা হবে না। নিজের মা ও বোনের সম্মানের কথা চিন্তা করে এবং পারিবারিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে মনে কষ্ট চেপে রেখে বিষয়টি ভুলে যাবার চেষ্টা করেন মিনহাজ। কিন্তু সম্প্রতি তার নববধূর সঙ্গে তাদের আচরণ ও নির্যাতন-মামলায় সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত মিনহাজ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings