in ,

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও খণ্ডকালীন কাজ

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়, তাদের অনেকেরই পছন্দের দেশ জার্মানি৷ পড়ালেখা শেষে গবেষণা ও পূর্ণকালীন কাজ করার সুযোগ, জীবনযাত্রার উচ্চমানই মূলত আকৃষ্ট করে তাদের৷

জার্মানির ১৬টি প্রদেশের মধ্যে ১৪টিতে শিক্ষার্থীদের কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না৷ প্রতি ছয় মাস অন্তর ২০০ থেকে ৪০০ ইউরো সেমিস্টার ফি দিতে হয়, যার মধ্যে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে রাজ্যে অবস্থিত, সেখানকার সকল গণপরিবহনের ভাড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে৷

তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রকৌশলবিদ্যার বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানববিদ্যা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়, প্রশাসনের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ৷

বাংলাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী জার্মানিতে আসে, তাদের মধ্যে অনেকের স্কলারশিপ, অর্থাৎ বৃত্তি থাকে৷ আর যারা বৃত্তি ছাড়া আসে, তাদের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ রয়েছে৷ সেমিস্টার চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা করে কাজ করা যায়৷ তবে যে কোনো ছুটি, অথবা সেমিস্টারের বিরতির সময় সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা, অর্থাৎ মাসে ১৬০ ঘন্টা কাজ করার অনুমতি রয়েছে৷

খণ্ডকালীন কাজের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে জার্মান ভাষা জানার প্রয়োজন থাকলেও, ইংরেজি ভাষা জেনেই করার মতো পর্যাপ্ত কাজও রয়েছে জার্মানিতে৷ তবে জার্মান ভাষা জানা থাকলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রা কিছুটা সহজ হয়৷ ছাত্রছাত্রীরা তাদের অধ্যয়নের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কাজের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে পারে৷

কোলন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সে কমিউনিকেশন সিস্টেমস এন্ড নেটওয়ার্কস-এ অধ্যয়নরত রিসাদুল ইসলাম হিমেল জানান, ‘‘আইটি ফিল্ডে প্রচুর সুযোগ রয়েছে কাজ করার জন্য কিন্তু একটু খুঁজে নিতে হয়৷ একই বিষয়ে অধ্যয়নরত শাবনাজ খানম মনে করেন, ‘প্রকৌশল বিদ্যায় অধ্যয়নরতদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সবসময়ই ছিলো৷ কিন্তু সুযোগ যেমন বেশি তার সবেচেয়ে বড় শর্ত হচ্ছে জার্মান ভাষা জানা৷’’ তবে ইংরেজি ভাষায়ও কাজ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে একটু বেশি খুঁজতে হয় বলে মনে করেন রিসাদুল ইসলাম হিমেল৷

সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্যেও রয়েছে একটি বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র৷ ইউনিভার্সিটি অব কোলন এর নর্থ অ্যামেরিকান স্টাডিজ এর শিক্ষার্থী ইসরাত শামীম স্বাক্ষর মনে করেন, ‘‘সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক এর শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্র অনেক বড়৷ আমরা ইন্টারডিসিপ্লিনারি যে কোন বিষয়েই কাজ করতে পারি৷’’ তবে সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিকের শিক্ষার্থীদের যেহেতু বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করতে হয়, কথা বলতে তাই তাদের জন্য জার্মান ভাষা জানা খুবই জরুরি৷ ‘জার্মান ভাষায় বি২ লেভেল পর্যন্ত জানা থাকলে তা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়’ বলেন ইসরাত শামীম স্বাক্ষর৷

কোলন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সে বিজনেস ইনফরমেশন সিস্টেমস এর শিক্ষার্থী শামিমা আক্তার আমাদের জানান ‘বর্তমান সময়ে ড্যাটা ব্যবহার এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাথে ব্যবসায় প্রশাসনের সমন্বয় হওয়ায় জার্মানিতে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন খণ্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ অনেক বেশি৷’

শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও ক্লাসের সুবিধার জন্য তাদের অফিস অনেক ক্ষেত্রে হোমঅফিসের সুযোগও দিয়ে থাকছে৷ বন ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মাশ-হুদা রহমান শিপ্রা জানান ‘আমার হয়তো মাসে একদিন বা দুইদিন অফিসে যেতে অথবা কোন বিশেষ মিটিং থাকলে যেতে হয়৷ এছাড়া আমরা আমাদের সুবিধাজনক সময়ে হোম অফিস করতে পারি’৷

করোনাকালীন লকডাউনের ফলে অনেক জায়গায় কাজের সুযোগ কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও,এখন আবার সে সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতিতে শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য জার্মান সরকার স্বল্প সুদে ছাত্র-ছাত্রীদের ঋণ এবং এককালীন প্রণোদনা দেয়৷

জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ জার্মানিতে চলমান দক্ষ জনশক্তির সংকট নিরসনে ভুমিকা রাখছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও৷ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছেও জার্মানি হতে পারে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য৷

ডয়চে ভেলে অবলম্বনে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings