‘আর দেখা হবে না’ গানের মতোই না ফেরার দেশে চলে গেলেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে গতকাল বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী (ইন্নানিল্লাহি…রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। জুয়েলের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘জুয়েলের মতো প্রতিভাবান শিল্পীর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গতকাল বাদ মাগরিব গুলশানের আজাদ মসজিদে জুয়েলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই সংগীতশিল্পীকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সংগীতাঙ্গনের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সন্ধ্যায় বনানী কবরস্থানে জুয়েলকে সমাহিত করা হয়। গানের পাশাপাশি উপস্থাপক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা হিসেবে বেশ পরিচিতি ছিলেন জুয়েল। ১৩ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন জুয়েল। শেষ পর্যন্ত ফেরানো গেল না এই সংগীতশিল্পীকে।
জুয়েলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে তার লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও ক্যানসার সংক্রমিত হয়। তখন থেকেই দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসাসেবা চলছিল। গত অক্টোবর থেকে জুয়েলকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে সম্প্রতি তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ২৩ জুলাই রাত থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এক সপ্তাহ পর গতকাল চিরবিদায় নেন এই শিল্পী। তার জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর।
ব্যান্ড সংগীত যখন তুমুল আলোচনায়, ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী কণ্ঠ নিয়ে হাজির হন শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ব্যাংকার বাবার চাকরির কারণে ছোটবেলায় তাকে থাকতে হয়েছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায়। মা-বাবার অনুপ্রেরণাতেই গানের জগতে পা রাখেন জুয়েল। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী একজনের কাছে গান শিখেছিলেন আর মঞ্চে প্রথম গান করেছিলেন তখন তিনি পড়তেন চতুর্থ শ্রেণিতে। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় চলে আসেন জুয়েল। এসেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। তখনই বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটতে শুরু করে। জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে (১৯৯৪)’, ‘আমার আছে অন্ধকার’ (১৯৯৫), ‘একটা মানুষ’ (১৯৯৬), ‘দেখা হবে না’ (১৯৯৭), ‘বেশি কিছু নয়’ (১৯৯৮), ‘বেদনা শুধুই বেদনা’ (১৯৯৯), ‘ফিরতি পথে’ (২০০৩), ‘দরজা খোলা বাড়ি’ (২০০৯) এবং ‘এমন কেন হলো’ (২০১৭)। একটি করে গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরও দুটি অ্যালবাম ‘তাতে কি বা আসে যায়’ (২০১৬) এবং ‘এই সবুজের ধানক্ষেত’ (২০১৬)।
বাবার কবরে শায়িত শাফিন আহমেদ
গতকাল মেঘলা দুপুরে রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রয়াত ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সংগীতাঙ্গনের অনেকেই। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় আকাশ থেকেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। শাফিন আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ব্যান্ড মাইলসের সদস্যরা। আরও এসেছিলেন শাহীন সামাদ, ফোয়াদ নাসের বাবু, মাকসুদ, নকীব খান, পিলু খান, পার্থ বড়ুয়া, শুভ্র দেব, প্রিন্স মাহমুদ, বাপ্পা মজুমদার, শেখ মনিরুল আলম টিপু, কমল, কবির বকুল, লতিফুল ইসলাম শিবলী, আসিফ ইকবাল, শওকত আলী ইমন, পলাশ, আঁখি আলমগীর, কৌশিক হোসেন তাপস, রুবাবা দৌলা মতিন, কানিজ সুবর্ণা, রমা, আরিফ, মুহিন, মিফতাহ জামান, সৈয়দ শহীদ, অদিত, জয় শাহরিয়ার, সালাহউদ্দিন লাভলুসহ অনেকে। এ সময় শাফিন আহমেদের নিথর দেহ দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আগেই জানা গিয়েছিল বনানীতে বাবা কমল দাশগুপ্তের কবরে শায়িত হবেন এই ব্যান্ড তারকা।
এদিন আজাদ মসজিদে বাদ জোহর জানাজা শেষে শাফিনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। বেলা ৩টায় বাবার কবরে সমাহিত করা হয় শাফিন আহমেদকে। মা কিংবদন্তি নজরুলশিল্পী ফিরোজা বেগমের পাশেই শায়িত হয়েছেন এই তারকা শিল্পী। পরিবার ও সহকর্মীরা চোখের জলে বিদায় দেন এই কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীকে। শাফিন আহমেদের কুলখানি হবে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর বনানী কবরস্থানের পাশে গুলশান কমিউনিটি মসজিদে। স্ত্রী রুমানা দৌলা, তিন পুত্র মাইসিম, আজরাফ ও রেহান এবং এক কন্যা রানিয়াকে রেখে গেছেন শাফিন আহমেদ।
গত ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় কনসার্টের মঞ্চে ওঠার খানিক আগেই হোটেল রুমে লুটিয়ে পড়েন ৬৩ বয়সি ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। এরপর হাসপাতালে ভর্তি, লাইফ সাপোর্ট এবং ২৫ জুলাই বাংলাদেশ সময় ঠিক সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় শাফিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান সেখানকার স্থানীয় বাঙালিরা। সোমবার সন্ধ্যায় শাফিনের মরদেহ বহনকারী উড়োজাহাজ ঢাকায় পৌঁছায়। গতকাল তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সমাহিত করা হয়।
শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। শৈশবে বাবা প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মা প্রখ্যাত নজরুল সংগীতিশিল্পী ফিরোজা বেগমের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত। শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে- দরদিয়া, নীলা, পাহাড়ি মেয়ে, আজ জন্মদিন তোমার, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, জ্বালা জ্বালা, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’।
GIPHY App Key not set. Please check settings