অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু দেখা গেল, যে যায় লঙ্কায়, সে–ই হয় রাবণ। তারা বোধ হয় হয় দীর্ঘদিন, ১০-২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। ইতিমধ্যে আওয়ামী ঘরানার বহু লোক তাদের উপদেষ্টা পরিষদে ঢুকে গেছেন। ছাত্রদের কর্মকাণ্ডে মনে হয়, তারাই দেশটা স্বাধীন করেছে, আর কেউ অংশগ্রহণ করেনি।’
সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আমরা সমর্থন করেছি, সামনেও করব। কিন্তু আপনারা আজীবন, ১০-২০ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না।’
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী এক ছাত্রনেতার একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দুঃখবোধে আক্রান্ত হই। দুদিন আগে ছাত্রদের একজন বলেছেন যে দুই হাজার লোক শুধু ভোট দেওয়ার জন্য জীবন দেয়নি। আরে, ভোট কি এত সোজা? ভোটই তো গণতন্ত্রের প্রতীক। এর জন্যই তো আমরা একাত্তর সালে লড়াই করেছি। নির্বাচনই তো গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান। আর এরা বলছে, ভোটের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। তাহলে কিসের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে? কিসের জন্য এত আত্মদান?’
‘ছাত্রনেতারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, তারা মনে করে, দুটো মিছিল করলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে ছাত্রদের সঙ্গে সারা দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। এই বিপ্লবে বিএনপিরই ৪২২ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। এর আগে বহু মানুষ গুম হয়েছে। সর্বশেষ যে আন্দোলন, তাতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল, অংশগ্রহণ ছিল। আমার এলাকা ভোলার লালমোহনে ১০ জন শহীদ হয়েছেন, একজনও ছাত্র নয়।’
হাফিজ উদ্দিন আহমদ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘অতি অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনী সংস্কার করে নির্বাচন দিন। বাকি সংস্কার করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এই নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করব, ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদের যে নাগরিক পার্টি আছে, তারাও অংশ নিতে পারে। অন্য কোনো দলকে সমর্থনও দিতে পারে। আমরা সবাই জনগণের সামনে উপস্থিত হব। জনগণ যাদের পছন্দ করবে, তাদের নির্বাচিত করবে। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।’
হাফিজ উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া এই সমাজ কীভাবে উত্তরণ হবে, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে পুনর্বাসন করা যাবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদার সামাজিক ন্যায়বিচার। এই সব কথা তো বর্তমান সরকারের কাছে শুনি না।’
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।
GIPHY App Key not set. Please check settings