পেনাল্টিতে ব্রাজিলকে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত করে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে উরুগুয়ে। লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে গোলশুন্য ড্র ছিল। আগামী বুধবার নর্থ ক্যারোলিনায় সেমিফাইনালে উরুগুয়ের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া।
রোববার আরিজোনায় অনুষ্ঠিত দিনের আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়া ৫-০ গোলে পানামাকে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে টিকেট পেয়েছেন কলম্বিয়া। এ নিয়ে টানা ২৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকলো কলম্বিয়া।
মঙ্গলবার নিউ জার্সির আরেক সেমিফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা লড়বে কোপা আমেরিকায় প্রথমবারের মত খেলার সুযোগ পাওয়া সারপ্রাইজ প্যাকেজ কানাডার।
৭৪ মিনিটে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার নাহিতান নানডেজ সরাসরি লাল কার্ড পেলেও ১০ জনের দলে পরিণত হয় উরুগুয়ে। একজন বেশি নিয়ে খেলেও গোল আদায় করতে পারেনি ব্রাজিল।
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের জন্য একটু আগে ভাগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ছিল দারুণ হতাশার। এ হারের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো ডোরিভার জুনিয়রের অধীনে অপেক্ষাকৃত তারুণ্য নির্ভর দলটির আরো অনেক কাজ বাকি রয়েছে।
২০২৬ বিশ্বকাপে নিজেদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে এখন থেকে ব্রাজিলকে পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। কোপা আমেরিকা থেকে বিদায় অন্তত সে শিক্ষা দিয়েছে সেলেসাওদের।
কালকের ম্যাচে সব মিলিয়ে দুই দল ৪১টি ফাউল করেছে, এতে ফুটবলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়েছে। অনেকটাই অপরিচিত মাঠে কোন দলই নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি। ৩৫ মিনিটে ম্যাচের প্রথম ও সেরা সুযোগটি আসে উরুগুয়ের সামনে। স্ট্রাইকার ডারউইন নুনেজ স্পষ্ট হেডের সুযোগ পেয়েছিলেন।
কিন্তু সময়মত তা কাজে লাগাতে না পারায় বল কাঁধে লেগে বাইরে চলে যায়। পরের মুহূর্তে রাফিনহার শট অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক সার্জিও রোশে। মার্সেলো বিয়েসলার উরুগুয়ে কখনই ম্যাচে নার্ভাস হয়ে পড়েনি। বরং ব্রাজিলের মিডফিল্ডকে প্রায়ই তারা পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
বিপরীতে ব্রাজিল লম্বা পাসে খেলার চেষ্টা করেছে। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের নিষেধাজ্ঞায় ১৭ বছর বয়সী এনড্রিক কাল মূল দলে খেলেছেন। কিন্তু সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার পজিশনে এনড্রিক তার শারিরীকি উপস্থিতির তেমন একটা জানান দিতে পারেনি।
একের পর এক ফাউলের কারনে ম্যাচের গতি প্রায়ই বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রডরিগোকে বাজেভাবে ট্যাকেলের কারনে ভিএআর রিভিউ নানডেজকে লাল কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত দেয়। এই ঘটনার পর উরুগুয়ে কোনমতে নির্ধারিত সময় শেষ করে পেনাল্টিতে ম্যাচটিকে নিয়ে যাবার পরিকল্পনায় খেলতে থাকে। এতে তারা সফলও হয়েছে।
পেনাল্টিতে ফেডেরিকো ভালভার্দে প্রথম স্পট কিকে সফল হন। বিপরীতে এডার মিলিটাওয়ের শট ডাইভ দিয়ে সেভ করেন রোশে। ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় শটটি ডগলাস লুইজ পোস্টে লাগান। ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সময় হোসে জিমিনেজের সামনে সুযোগ আসে উরুগুয়েকে জয় উপহারের।
কিন্তু তার শটটি দুর্দান্ত ভাবে রক্ষা করেন এ্যালিসন বেকার। বদলী খেলোয়াড় গাব্রিয়েল মার্টিনেলি গোল করে ব্রাজিলের আশা টিকিয়ে রাখেন। কিন্তু মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল উগার্তে তার শটটি নিতে কোনো ভুল করেননি। আর এতেই ১৫-বারের কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়নদের শেষ চার নিশ্চিত হয়।
পুরো ৯০ মিনিট দারুন ধৈর্য্য নিয়ে খেলা দলের সকলের প্রশংসা করেছেন উরুগুয়ে কোচ বিয়েসলা, ‘আমি আত্মরক্ষার থেকে আক্রমণে বেশি প্রলুব্ধ হয়েছি। এ ধরনের ম্যাচে সুযোগ হারালে চলবে না।
প্রতিপক্ষের তুলনায় আমরা প্রতিরোধ করেছি বেশি, ১৫ মিনিট একজন কম নিয়ে খেলেও তাদের এগুতে দিইনি।
তিনি বলেন, আমাকে যদি জিজ্ঞেস করো ৯০ মিনিটে আমি যদি তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারতাম, তবে আমি খুশি হতাম কি না। আমি বলবো না, যা খেলেছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট। আজ আমরা ব্রাজিলের মতো দলকে রুখে দিয়েছি। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যেকোনো প্রতিপক্ষই এখন আমাদের সমীহ করবে।’
ব্রাজিলিয়ান কোচ ডোরিভাল জুনিয়র বলেছেন, ‘আমরা অপরাজিত থেকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিচ্ছি। কিন্তু এতে আমি সন্তুষ্ট নই। টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা মোটেই সেই মানের খেলা উপহার দিতে পারিনি। কোনো একটি নির্দিষ্ট ম্যাচের কথা বলতে চাই না।
তিনি বলেন, প্রতিটি ম্যাচেই আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, লড়াকু মানসিকতা ছিল। আমাদের আরও ধৈর্য্য ধরতে হবে। বিশ্বকাপের আগে এখনো হাতে দুই বছর সময় বাকি আছে। প্রথম আমদেরকে বাছাইপর্বের বাঁধা পেরোতে হবে। এ মুহূর্তে দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে আমরা টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে রয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই এ পজিশন আমাদের অস্বস্তিতে রেখেছে।
GIPHY App Key not set. Please check settings