in

শুক্রবার বিকেলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া নিম্নচাপটি শুক্রবার বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। নামটি মালদ্বীপের দেওয়া।

বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার প্রভাবে দেশের কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে তাপমাত্রা কমতে পারে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল নাগাদ মোংলা-পটুয়াখালী উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বৃহস্পতিবার এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে আজ সন্ধ্যা ৬টায় উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা,নবরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

ঢাকা পূর্ব/উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০-১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ৪০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠে যেতে পারে।

অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলো ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার শেষ রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিতে পারে। এটি শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর নাগাদ গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১১টি জেলায় আঘাত হানার আশংকা রয়েছে।

জেলাগুলো হলো—বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও চট্টগ্রাম। গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৬৪ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এটি ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আগামীকাল (শুক্রবার) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত আনতে পারে। গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে মিধিলি। নামটি মালদ্বীপের দেওয়া বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু এখন পূর্ণিমা নেই। বাতাসের গতিবেগ কম, তাই এখানে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা অনেক কম। আমি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেব—তাঁরা যাতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখেন। আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে খাবার এবং নিরাপদ খাবার পানি রাখেন।’

তিনি বলেন, গত মাসে ঘূর্ণিঝড় হামুনের সময় বরাদ্দ দেওয়া চাল, শুকনা খাবার, গোখাদ্য, শিশু খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলাম। আশা করছি সে অর্থ মজুত আছে। সেগুলো আপনারা ব্যবহার করবেন, খরচ করবেন। আরও যদি কিছু প্রয়োজন হয়, আমাদের জানাবেন আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা করে দেব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings