উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দিন পার করলো দেশ। ২০০৬ সালের ভয়াল ২৮ অক্টোবরের পর চলতি বছরের দিনটিতেও রাজনৈতিক সংঘাতে রক্ত ঝরেছে।
নানা নাটকীয়তাসহ দিনের শুরুটা ভালো হলেও ত্রিমুখী সংঘর্ষে রক্ত ঝরল শেষ পর্যন্ত। নিহত হয়েছেন এক যুবদল নেতা ও পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মীসহ অনেকে।
কয়েকদিনের রাজনৈতিক উত্তেজনার পর শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপি ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করার অনুমতি পায়। অনুমতি না পেয়েও শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় জামায়াতও।

শুক্রবার বিকেল থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসেন তারা। শনিবার ভোর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ে হন। দুপুরের আগ পর্যন্ত নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির সমাবেশ চলে। এ সমাবেশের সীমা ছাড়িয়ে যায় ফকিরাপুল, বিজয়নগর ও কাকরাইল মোড় পর্যন্ত।
দুপুরে পর কাকরাইল মোড়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। কাকরাইল মোড় দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যাওয়ার সময় বিএনপি কর্মীরা ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ সময় বিএনপি কর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালান। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অগ্নিসংযোগ করেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা কাকরাইল ছেড়ে গেলেও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে বিজিবি মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
কাকরাইল মোড়ের সংঘর্ষের উত্তাপ পৌঁছে যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। বিএনপি নেতাকর্মীরা নাইটিংগেল মোড় থেকে পুরানা পল্টন পার হয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে পুরানা পল্টনে আসে আওয়ামী লীগ। এ সময় দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটে।
বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এছাড়া ৪১ জন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নয়াপল্টনে সংঘর্ষ চলাকালে শামীম মোল্লা নামে এক যুবদল নেতা নিহত হন। দুপুরে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন
সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেন বলে দাবি করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন।
পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাতটির মতো গাড়ি পুড়ে যায়। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, বিআরটিসি ও বলাকা বাস এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন দুষ্কৃতকারীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রাজধানীর কাকরাইলে হামলার শিকার হন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত পাঁচ সাংবাদিক।
বিএনপি-জামায়াতের ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে পুলিশি বাধার অভিযোগ এনে বিএনপি রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দিয়েছে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগও সারাদেশে শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়। হরতালের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতও
বিএনপি-জামায়াতের মহাসমাবেশের দিনের আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় তাদের ৮৪১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
GIPHY App Key not set. Please check settings