in

তামিমের বরিশালকে হারাল সাকিবের রংপুর

উত্তেজনা ছড়াবে জানা ছিল, তবে এত নাটকীয়তা হবে তা ভাবেনি হয়তো কেউ। ভালো শুরুর পর হঠাৎ ধপাস ভুগিয়েছে দুই দলকেই। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে যদিও শেষ ওভারে এসে বিজয়ী হাসি হেসেছে রংপুরই৷ যা আসরে তাদের নবম জয়৷ বিপরীতে প্লে অফে যাওয়া কঠিন হয়ে গেল বরিশালের।

সোমবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামে টসে জিতে আগে ব্যাট করে বরিশাল। ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান তুলে তারা। আবু হায়দার রনি নেন ৫ উইকেট। জবাবে ১৯.৩ ওভারে এসে ১ উইকেটের জয় পায় রংপুর রাইডার্স। সেই সাথে নিশ্চিত করে কোয়ালিফায়ার।

দুই দলই মুখোমুখি হয় হঠাৎ ছন্দ পতনের। বরিশাল ১ উইকেটে ১১০ রান তুলার পর পরের ১৯ রান তুলতে হারায় আরো ৭ উইকেট। এদিকে রংপুর ৫.৫ ওভারে ১ উইকেটে ৭৪ রান তুলার পর পরের ১১ রান তুলতে হারায় আরো ৪ উইকেট। জয় পেলেও যা শেষ পর্যন্ত ভুগায় রাইডার্সদের।

জবাব দিতে নেমে মুমিনুল হক ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। প্রথম ওভারেই মায়ার্সের শিকার হন তিনি। তবে দলের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়তে দেননি ব্রেন্ডন কিং ও সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচগুলোয় খুব একটা প্রভাব ফেলতে না পারলেও বরিশালের বিপক্ষে জ্বলে উঠেন কিং।

সাকিব বরাবরের মতো প্রথম বল থেকেই আক্রমণ শুরু করেন। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন মনযোগ ছিল রানের দিকেই। কিংয়ের সাথে গড়ে তুলেন ২৪ বলে ৫৩ রানের জুটি। পাওয়ার প্লের শেষ বলে কিংকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। কিং ফেরেন ২২ বলে ৪৫ রানে।

এক ওভার পর ফেরেন সাকিবও। মিরাজকে ছক্কা হাকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আউট হবার আগে ১৫ বলে করেন ২৯ রান। পরের ওভারে নুরুল হাসান সোহানকে (২) হারায় রংপুর। শেখ মেহেদীও পারেননি জ্বলে উঠতে, ফেরেন ১১ বলে ৭ রানে।

১ উইকেটে ৭৪ থেকে ৮৫ পর্যন্ত পৌঁছাতেই ৫ উইকেট হারানো রংপুরকে পথ দেখায় ষষ্ঠ উইকেট জুটি৷ টম মুরস ও জিমি নিশাম মিলে যোগ করেন ৩১। মুরস ফেরেন ১৭ বলে ১৭ করে৷ তবে প্রিটোরিয়াসকে সাথে নিয়ে আরো ১৯ রান যোগ করে বলের সাথে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনেন নিশাম। তবে জিতিয়ে ফিরতে পারেননি নিশাম। ফেরেন ১৭ বলে ২৮ করে।

যখন ১৭ বলে ৩ রান প্রয়োজন তখন ফের শুরু হয় নাটক। প্রিটোরিয়াস ফেরেন ১৫ বলে ১৩ করে। রংপুর হারায় ৮ম উইকেট। দশ নম্বরে নেমে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন হায়দার, তবে তিনি ক্যাচ হয়ে ফেরায় দুলতে থাকে ম্যাচের ভাগ্য৷ বরিশালের প্রয়োজন ছিল ১ উইকেট, আর রংপুরের ২ রান। যেখানে ৩ বল বাকি থাকতে বিজয়ী হয় রাইডার্সরাই।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করেছিলেন তামিম। পরের চার ওভারে চালান তাণ্ডব। স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৩৮ রান, যার মাঝে ৩৩ আসে তামিমের ব্যাটে। তাকে ফিরিয়েই দলকে প্রথম উপলক্ষ এনে দেন সাকিব। দু’জনের দ্বৈরথে জিতে গেলেন নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার।

তামিমকে ফিরলেও কমেনি বরিশালের রানের গতি, আরো বাড়িয়ে দেন কাইল মায়ার্স। দু’জনের যুগলবন্দীতে আসে ৪৭ বলে ৭২ রান। জুটি ভাঙেন নিশাম। ১১.৪ ওভারে দলীয় ১১০ রানের ফেরেন টম ব্যান্টন। ২৪ বলে ২৬ করে আউট হন তিনি।

এরপরই রূপকথার মতো যেন সব বদলে যায়। ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেন আবু হায়দার রনি। বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই পান উইকেটের দেখা, একই ওভারে নেন আরো দুই উইকেট। প্রথম বলে মুশফিককে ফেরান সোহানের ক্যাচ বানিয়ে, একবল পর সৌম্যকে ফেরান ০ রানে৷ তবে বড় শিকারটা করেন ৫ম বলে। মায়ার্সকেও ধরান সাজঘরের পথ।

আউট হবার আগে জ্বলে উঠেছিলেন মায়ার্স। কেউ দাঁড়াতে পারছিল না তার বিপরীতে। তবে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে তাকে ফেরান রনি। আউট হন ২৭ বলে ৪৬ রান করে। তবে এখানেই শেষ নয়, পরের ওভারে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও পরিণত করেন শিকারে, আউট করেন ৯ রানে।

মেহেদী মিরাজকে ১৭তম ওভারে ফিরিয়ে পূরণ করেন পাঁচ উইকেটের মাইলফলক। সেজদা দিয়েই তা উদযাপন করেন এই পেসার। ততক্ষণে বরিশাল দেখতে শুরু করেছে চোখে অন্ধকার। পরের ওভারে হাসান মাহমুদ কেশভ মহারাজকে ফেরালে ১২৯ রানে ৮ উইকেট হারায় বরিশাল।

১১০ রানে ১ উইকেট থেকে পরের ১৯ রান তুলতে ৭ উইকেট হারানো দলটা নবম উইকেট হারায় শেষ ওভারে সাইফুদ্দীন ১০ রানে ফিরলে। তাকেও ফেরান হাসান মাহমুদ। ১২ রানে ৫ উইকেট নেন রনি, যা বিপিএল ইতিহাসের চতুর্থ সেরা স্পেল। এবারের বিপিএলে সবার সেরা।

এই হারে কঠিন হয়ে গেল বরিশালের প্লে অফ স্বপ্ন। কুমিল্লার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা তাই ডু অর ডাই। জিততেই হবে বরিশালকে। অন্যথায় বেজে যেতে পারে বিদায় ঘণ্টা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

GIPHY App Key not set. Please check settings