ঈদুল ফিতরের মধ্যেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল, গ্রেনেড–বোমার বিস্ফোরণ থামেনি। তাতে মংডু টাউনশিপের লোকজন যেমন শান্তিতে ঈদ উদ্যাপন করতে পারছেন না, তেমনি নাফ নদীর এপারে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ সীমান্তের লোকজনও শঙ্কার মধ্যে ঈদ উদ্যাপন করছেন। ওপারের বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপসহ আশপাশের এলাকা।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে সীমান্তের ওপারে মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে পেরাংপুরা ও হাস্যুরাতা এলাকায় বিকট শব্দে ১০-১২টি মর্টার শেল ও গ্রেনেড–বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে গ্রামগুলোর বিপরীত দিকে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে থাকা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কেঁপে ওঠে। থেমে থেমে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মংডু টাউনশিপের উত্তর বলিবাজার, নাকফুরা, রাইক্ষবিল, শীলখালী, মাঙ্গালা এলাকায়ও ৫০-৬০টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া, আচারবুনিয়া, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া, নেটংপাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের রাখাইনপল্লি, ফুলের ডেইল, মৌলভিপাড়া, খারাংখালী, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া, কাঞ্জরপাড়াসহ অন্তত ১৭টি গ্রামের বাসিন্দারা ভূকম্পন অনুভব করেন।

টানা দুই মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে চলছে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই–সংঘাত। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, চলমান লড়াইয়ে ইতিমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব পাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১২টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। কিছুদিন ধরে বুচিডং ও মংডু টাউনশিপ দখলের জন্য শক্তি প্রয়োগ করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। দখলে নেওয়া সীমান্তচৌকি ও পুলিশ ফাঁড়ি পুনরুদ্ধারে সরকারি বাহিনী বিমান হামলা এবং শক্তিশালী মর্টার শেল নিক্ষেপ করলেও তা কাজে আসছে না। সংঘাত দিন দিন নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে ওপারে বিকট শব্দের বিস্ফোরণ ঘটছে। বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে পুরো সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঘরবাড়ি। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির মতো গুলির শব্দও ভেসে আসছে। তাতে দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও দ্বীপের চারদিকে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার আছে। দুপুর ও বিকেলে মিয়ানমারের আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেলেও বাংলাদেশ সীমানা অতিক্রমের ঘটনা ঘটেনি।
দ্বীপের মাঝের পাড়ার গৃহিণী আয়েশা খাতুন বলেন, শুক্রবার সকালে ফজরের নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় তিনি প্রথম মর্টার শেলের বিকট শব্দ শুনতে পান। এ সময় তাঁর বাড়ি কেঁপে ওঠে। আগেও এ ধরনের ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায় তিনি অবাক হননি।
হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী ও হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ঈদের দিনেও টেকনাফের লোকজনকে ওপারের বিস্ফোরণ আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এপারে এসে পড়বে—এই শঙ্কায় ভুগছেন টেকনাফ সীমান্তের মানুষ। টানা দুই মাস ধরে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের পাঁচটি ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের অন্তত ২৩ হাজার মানুষ নাফ নদীর তীরের জমিতে ধান, শাকসবজির চাষ, মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ করতে পারছেন না। সাত হাজারের বেশি জেলে মাছ ধরতে নাফ নদীতে নামতে পারছেন না।
রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ–২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
GIPHY App Key not set. Please check settings